পাওনাদারের ধাওয়ায় ৪০ ফুট গভীরে যুবক, উদ্ধার করল ফায়ার সার্ভিস

পাওনাদারের ধাওয়া খেয়ে শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া এলাকায় সালমান (২৪) নামে এক যুবক পালানোর জন্য একটি ভবনের ছাদে উঠেন। ছাদ থেকে পালানোর সময় চার বিল্ডিংয়ের সংযোগস্থলের ভয়েড স্পেসের ৪০ ফুট গভীর পড়ে যান তিনি। নিচে পড়ে গিয়ে বাঁচার কোনো পথ না পেয়ে চিৎকার করতে থাকে ওই যুবক।

সালমানের এই করুণ দশা দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা রাতে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি উদ্ধার দল রাত ১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার দল ঘটনাস্থলে এসে চারটি ভবনের সংযোগস্থলে ৩ ফুট বাই ২ ফুটের অপ্রশস্ত ভয়েড স্পেসের ৪০ ফুট গভীরে পরে থাকা সালমানের গোঙানির শব্দ শোনতে পান। পরে লাইট দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ওই যুবকের অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হোন। এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সালমানের সঙ্গে কথা বলে তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন।

পরে সব কিছু নিশ্চিত হয়ে রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে ওই যুবককে উদ্ধারের অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা। প্রায় এক ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষে রাত ২টা ৩০ মিনিটে ৪০ ফুট গভীর থেকে সালমানকে জীবিত উদ্ধার করে নিয়ে আসেন উদ্ধারকারীরা।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়, শনিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে খবর আসে, গেন্ডারিয়ার ডিস্টিলারি রোডে একটি চার তলা বাড়ির ভয়েড স্পেসের ৪০ ফুট গভীরে এক যুবক আটকে আছে। আটকা থাকা যুবক চিৎকার করে স্থানীয়দের বাঁচানোর জন্য আকুতি জানাচ্ছে। এ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল রাত ১ টা ১০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পোঁছায়।

উদ্ধারকারীরা ভবনের ছাদে গিয়ে দেখেন, ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার কিছু দেখা যাচ্ছে না। পরে লাইটের আলো ফেলে অস্পষ্টভাবে দেখতে পান পড়ে থাকা যুবককে। চারটি ভবনের সংযোগস্থলে ৩ ফুট বাই ২ ফুটের অপ্রশস্ত ভয়েড স্পেসটি ওপর থেকে দেখলে মনে হয় মাটির নিচে চলে যাওয়া কোনো অন্ধকার সুড়ঙ্গ বা গর্ত। নিচে পড়ে থাকা ব্যক্তির তখনো চেতনা আছে, আহত অবস্থায় সে অল্প সাড়া শব্দ করছে।। উদ্ধারকারীদের প্রশ্নে রেসপন্স করতে পারছেন তিনি।

এর পর সকল বিষয় বিবেচনা করে রাত ১ টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। অভিযানে উদ্ধারকর্মী মুক্তারকে ব্রিদিং অ্যাপরেটাস পরিয়ে ফুলবডি হারনেস বেঁধে নামানো হয় ওই অন্ধকার সুড়ঙ্গে। সঙ্গে দেয়া হয় অতিরিক্ত আরেকটি ফুলবডি হারনেস। উপর থেকে হারনেসের প্রান্ত ধরে রাখেন অপর উদ্ধারকর্মীরা। দুরন্ত সাহস আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্ধকারের ভয়কে জয় করে সহকর্মীদের সহায়তায় মুক্তার পৌঁছে যান সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে, আহত অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে থাকা যুবকের কাছে।

উদ্ধারকর্মীকে কাছে পেয়ে বিচলিত যুবক বেঁচে থাকার আঁকুতি জানায়। তাকে অভয় বাণী শুনিয়ে ফায়ারফাইটার মুক্তার সঙ্গে নেওয়া অতিরিক্ত ফুলবডি হারনেসে সুরক্ষিত করে বেঁধে ফেলে আহত ব্যক্তিকে। এবার উপরে সংকেত পাঠান আহত ব্যক্তিকে টেনে তোলার। সকলের সহযোগিতায় রাত ২টা ৩০ মিনিটে চারতলা থেকে পড়ে যাওয়া এবং সুড়ঙ্গের নিচে আটকে থাকা সালমানকে (২৪) জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।

ফায়ার সার্ভিস আরও জানায়, উদ্ধারের পর সালমানকে অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সর্বশেষ রোববার রাত ৯টায় ফায়ার সার্ভিস খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সালমান সুস্থ আছেন এবং তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উদ্ধারের পর সালমান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জানায়, সে ওই এলাকার বাসিন্দা। তার কাছে অনেক লোক টাকা পান। ঘটনার দিন পাওনাদারদের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় সেই ৪০ ফুট গভীরে পড়ে যায়।